প্রকাশ: 6 April, 2021 3:32 : PM
চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে গিয়ে বন্ধুদের সহযোগীতায় খুন হয় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আমির গাজী। মূলত এক লাখ দশ হাজার টাকা মূল্যের মোটরসাইকেলটি চুরি করে আত্মসাত করতে পরিকল্পিতভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আর খুনের পর আমির গাজীর পরিবারকে জানানো হয় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিহতের পিতা আলতাফ গাজী।
তিনি জানান, আলেকান্দা ১৪নং ওয়ার্ডের রিফিউজি কলােনীর বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সী তার ছেলে আমির গাজী (২৪) বরিশাল সিটি করপােরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মীরা বাড়ীর পুল মসজিদের সামনে কবুতর ও পাখির দোকান রয়েছে। তার ব্যবসায়িক কাজে চলাফেরার জন্য একটি লাল রংয়ের ইয়ামাহা মােটর সাইকেল ব্যবহার করতো সে। মোটরসাইকেলটির মূল্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আমির গাজী মােটর সাইকেলটি মীরাবাড়ীর পুল পলাশ গলির মুখে রেখে নিজের পাখির দোকানে যায়। বিকেল ৫টার দিকে ফিরে মোটরসাইকেলটি খুঁজে পায় না। স্থানীয় অলি (১৭) জানান, মীরা বাড়ির পুল এলাকার এমরান, হৃদয় এবং রাজা মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে গেছে। সেই সূত্র ধরে সন্ধান পায় নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের সিএন্ডবি রােডের পশ্চিম পাশে ইসলামপাড়ায় আসাদুজ্জামান বাদশার ওয়ার্কশপে মোটরসাইকলেটি রাখা আছে। খবর পেয়ে ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা পৌনে ৬ টার দিকে আমির গাজী বাদশার ওয়ার্কশপে মটরসাইকেল দেখতে পান। সে তার মোটরসাইকলটি বের করে আনতে গেলে অভিযুক্ত চোর এমরান, হৃদয় এবং রাজা মোটরসাইকেলের ত্রুটি মেরামত করে দেওয়ার কথা বলে সময় নষ্ট করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন আমির গাজীর বন্ধু হানিফ আকন, মেহেদী, বনি আমিন ও রাফি সহ ১৪/১৫ জন।
মোটরসাইকেল চুরির কথা বলায় সংঘবদ্ধ কিশোর গ্রুপটি জিআই পাইপ, কাঠের চলা, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করেন আমির গাজীকে। মারধরে আমির গাজী অসুস্থ হয়ে পড়লে মারধরকারীরাই তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে অবস্থার আরো অবনতি হলে দুই ঘন্টা পর আমির গাজির পিতাকে মোবাইলে তার বন্ধুরা জানায়, আমির গাজী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। কিন্তু শারীরীক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় মৃত্যুবরণ করেন আমির গাজী।
এ ঘটনায় নিহতের মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় ২৭ জানুয়ারি ৭ জনকে আসামী করে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ দুইজনকে আটক করলেও তারা বর্তমানে জামিনে রয়েছে। ওদিকে ৪ এপ্রিল খাদিজা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে আবারও হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৯ জনকে আসামী করা হয়েছে। এরা হলো মােঃ এমরান (২২), হৃদয় (২৪), মােঃ রাজা (২২), মােঃ আবিদ (১৯), মােঃ মেহেদী (১৯), মােঃ রাফি (১৯), মােঃ আসাদুজ্জামান বাদশা (২৪), বনি আমিন (২৩), মােঃ হানিফ।
আলতাফ গাজী বলেন, হত্যাকারীরা জামিনে বের হয়ে আমার পরিবারকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বে ঘাতকদের গ্রেফতার করার দাবী জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত আমির গাজীর মা খাদিজা বেগম, বোন জোনাকি ইসলাম আকন, নানী জোহরা বেগম, ফুপাতো ভাই সুজন, চাচাতো ভাই মোঃ খায়রুল উপস্থিত ছিলেন।